পাঠ ১: ঈশ্বর কিভাবে কথা বলেন?

পৃষ্ঠাঃ 1, মোট পৃষ্ঠাঃ 2, অনুশীলনীঃ পাঠ ১: ঈশ্বর কিভাবে কথা বলেন?

ঈশ্বর কি সত্যিই আমাদের সাথে কথা বলেন?

মাবুদ না থাকলে আপনি কি অত্যান্ত একাকী বোধ করবেন না? অথবা যদি তিনি থেকে থাকেন তবে কখনোই আমাদের সাথে কথা না বলেন?

অনেক লোক চায় তারা ব্যক্তিগতভাবে মাবুদের কথা শুনতে এবং তাঁর সাথে কথা বলতে । কিন্তু কিভাবে তিনি আমাদের সাথে কথা বলতে পারেন? তিনি কি খুব দূরে এবং খুব পবিত্র নন?

অনেক লোক বিশ্বাস করে যে মাবুদ আগে মানবজাতির সাথে কথা বলেছেন, নবীদের সাথে কথা বলেছেন। সম্ভবত, আপনিও বলবেন মাবুদ তার কিতাবের মধ্য দিয়ে কথা বলেছেন। হয়তো আপনি এমনও বিশ্বাস করেন যে মাবুদ আপনার সাথে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেন – তাঁর কিতাবে এমন কিছু আছে যা আপনার নির্দিষ্ট চাহিদার কথা বলে; অথবা এমনটি স্বপ্নের মাধ্যমে কথা বলেন। সম্ভবত এটি একটি কারন যার জন্য আপনি এটি পড়ছেন।

মাবুদ মানুষের সাথে কথা বলেন!

সকল ধর্মেই মানুষ বিশ্বাস করে যে মাবুদ কথা বলেন! ইহুদী, খ্রীষ্টিয়ান এবং মুসলিম বিশ্বাস করেন যে মাবুদ তাওরাত ও যবুর কিতাবের মধ্য দিয়ে কথা বলেন। তারওয়াতে মাবুদ ইস্রায়েলের মানুষদের জন্য তার শরিয়া/ আইন মুসার মধ্য দিয়ে দিয়েছেন। যবুরে যাকে গীতসংহীতাও বলে থাকে সেখানে মাবুদ নবী দাউদ (আঃ) কে কাওয়ালী ও এবাদত রচনা করার জন্য উৎসাহিত করেছেন।

খ্রীষ্টিয়ান এবং মুসলমানরাও বিশ্বাস করে যে মাবুদ ইঞ্জিলের মাধ্যমে কথা বলেছেন, যে বইটিতে আমরা ঈসার বাণী খুঁজে দেখতে পাই।

মাবুদ নবীদের সাথে কথা বলেছেন!

পবিত্র কিতাবগুলো থেকে, মাবুদ ও মানুষের সাথে কথা বলার অনেক উদাহরন দেওয়া যায়। তাওরাতে আমরা দেখতে পাই মাবুদ নবী ইব্রাহিম ও নবী মূসার সাথে সরাসরি কথা বলেছিলেন।

যবুরে আমরা এমন কিছু পাইনা যে মাবুদ হযরত দাউদের আঃ)’র সাথে সরাসরি কথা বলেছেন। এটা হল মাবুদের শক্তি যা নবী দাউদের, হৃদয়, মুখ ও আঙ্গুল কে গান ও কবিতা রচনা করেছেন যা মাবুদ আমাদের হৃদয়ে সাথে কথা বলতে ব্যবহার করেন।

নবী দাউদ রাজা হবার পুর্বে তিনি একজন মেষপালক ছিলেন! তার সবচেয়ে জনপ্রিয় একটা গান হল” মাবুদ আমার পালক” এই গানের মধ্য দিয়ে তিনি মাবুদকে একজন উত্তম

[1] মাবুদ আমার পালক, আমার অভাব নেই।

[2] তিনি আমাকে মাঠের সবুজ ঘাসের উপর শোয়ান, শান্ত পানির ধারেও আমাকে নিয়ে যান।

[3] তিনি আমাকে নতুন শক্তি দেন; তাঁর নিজের সুনাম রক্ষার জন্যই আমাকে ন্যায় পথে চালান।

[4] ঘন অন্ধকারে ঢাকা উপত্যকা পার হতে হলেও আমি বিপদের ভয় করব না,

কারণ তুমিই আমার সংগে আছ; তোমার মুগুর আর লাঠি দূর করে দেয় বিপদের ভয়।

জবুর 23:1-4

অবশেষে, ইঞ্জিলে আমরা পাই ঈসা তাঁর লোকদের সাথে কথা বলছেন! তার বাণীতে মাবুদ সম্পর্কে তিনি অনেক বিষয় প্রকাশ করেছেন। ঈসা মহান কর্তৃত্বের সাথে কথা বলে, তবে অন্তরিকতা এবং করুণার সাথেও কথা বলেছেন। শুরুতে, তার সবচেয়ে জনপ্রিয় বক্তৃতা হল “ পর্বতে বসে দেওয়া উপদেশ”। তিনি শিক্ষা দিয়েছেন যে সে পুর্ববর্তী কিতাব বাতিল করবেন না।

[17] “এই কথা মনে কোরো না, আমি তৌরাত কিতাব আর নবীদের কিতাব বাতিল করতে এসেছি। আমি সেগুলো বাতিল করতে আসি নি বরং পূর্ণ করতে এসেছি। [18] আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, আসমান ও জমীন শেষ না হওয়া পর্যন্ত, যতদিন না তৌরাত কিতাবের সমস্ত কথা সফল হয় ততদিন সেই তৌরাতের এক বিন্দু কি এক মাত্রা মুছে যাবে না। [19] তাই মূসার শরীয়তের মধ্যে ছোট একটা হুকুমও যে কেউ অমান্য করে এবং লোককে তা অমান্য করতে শিক্ষা দেয় তাকে বেহেশতী রাজ্যে সবচেয়ে ছোট বলা হবে। কিন্তু যে কেউ শরীয়তের হুকুমগুলো পালন করে ও শিক্ষা দেয় তাকে বেহেশতী রাজ্যে বড় বলা হবে।

( ইঞ্জিল, মথি 5:17-19 )

মাবুদ সত্যিই মানুষের সাথে কথা বলেন! ‍তিনি আমাদের সকলের সাথে কথা বলেন। যখন আমরা তাঁর কিতাব পরি ও আমাদের হৃদয় খুলে দেই, যেন তিনি আমাদের সাথে ব্যাক্তিগতভাবে কথা বলছেন। ঈসা নবীর সাহাবিদের মধ্য একজন লিখেছেন মাবুদ প্রকৃতপক্ষে সকল নবীদের মধ্য দয়ে কথা বলেছেন।

'আল্লাহ্‌ আগেকার দিনে বহুবার ও বহুরূপে নবীদের দ্বারা আমাদের পূর্ব-পুরুষদের কাছে কথা বলেছেন; '

ইবরানী 1:1

মাবুদ কথা বলেন কিন্তু হুকুম দেন না।

উপরের উদাহরনে আমরা দেখেছি মাবুদ মানুষদের সাথে বিভিন্ন উপায়ে কথা বলেছেন। দশ আজ্ঞা/ আদেশ আক্ষরিক অর্থে মাবুদের দ্বারা মুসাকে আদেশ করা হয়েছিল, এবং মাবুদ যা বলেছিলেন তা তিনি লিখেছিলেন।

ইয়াকুবের পুত্র ইউসুফের সাথে মাবুদের সাথে কথা বলেছিলেন, অদূর ভবিষ্যতে কী ঘটতে চলেছে তা দেখিয়েছিলেন। কখনও কখনও নবীরা এমনকি জেগে থাকা অবস্থায় মাবুদের কথা শুনতে পান। তাওরাতে বলে, মাবুদ মূসা নবীর সাথে একই ভাবে কথা বলতেন যেভাবে একজন মানুষ তার বন্ধুদের সাথে বলেন।

এটা প্রমানিত পবিত্র কিতাব পরিবর্তীত হয়নি

ইহুদি এবং খ্রিষ্টিয়ানরা কিতাব/বাক্যগুলোকে সংরক্ষণের জন্য অত্যন্ত যত্নবান হয়েছেন, তারা এটিকে পবিত্র বলে মনে করে। ইহুদিরা তাদের কিতাবকে অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ন বলে মনে করেন। যখন একটি স্ক্রোল চুড়ান্ত করা হত,তারা একটি নতুন অনুলিপি করত। প্রথমে তারা পুরাতন স্ক্রোলের শব্দগুলো গুনত। এবং তারা তার অনুলিপি তৈরির পর আবার শব্দগুলো গুনত। যদি গননা আলাদা হত তারা সেটি কারেকশন না করে তারা পুরুরায় তৈরি করত।

1947 সালে, ফিলিস্তিনে, পবিত্র কিতাবের হাজার হাজার পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়। এগুলি 100 খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে 100 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে লেখা হয়েছিল। এই পাণ্ডুলিপিগুলি প্রমাণ করে যে তখন এবং এখন পর্যন্ত পবিত্র গ্রন্থগুলি পরিবর্তন করা হয়নি।

খ্রিষ্টিয়ানদের নতুন নিয়ম, ইঞ্জিল, ১ম শতাব্দীতে লেখা হয়েছিল। আজ, আমাদের কাছে ইঞ্জিলের হাজার হাজার পুরানো পাণ্ডুলিপি রয়েছে; তাদের মধ্যে শত শত রয়েছে যা হযরত মুহাম্মাদ মক্কায় প্রচারের পূর্বের সময়কার। ইঞ্জিল একদম প্রথম দিকে সিরিয়ান ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল। আমাদের কাছে একটি সম্পূর্ণ অনুবাদ আছে যা পঞ্চম শতাব্দীর।

অনুবাদগুলি আসল প্রমান করে। কিন্তু অবশ্যই, আমরা সর্বদা আসলটি পছন্দ করি যখন আমরা নিশ্চিতভাবে জানতে চাই যে মাবুদ কী বলছেন। অনুবাদগুলি এমন লোকদের জন্য দরকারী যারা মূল ভাষা জানেন না, যেমন হিব্রু। কিন্তু সঠিক অর্থ জানার জন্য, আমাদের মূল/আসলটা ব্যবহার করা উচিত। যা আমাদের কাছে আছে।

মাবুদ তার বাণী রক্ষা করবেন

আমরা সবাই বিশ্বাস করি যে মাবুদই তাঁর কিতাব রক্ষা করেন। কিন্তু নিজেকে প্রশ্ন করুন কেন তিনি তাঁর একটি বইকে রক্ষা করবেন, কিন্তু অন্যগুলোকে নয়? কেন তিনি সাধারণ মানুষকে অসৎ উদ্দেশে তাঁর গ্রন্থকে নষ্ট/বিকৃত করতে দেবেন?

যে লোক এই কিতাবের সমস্ত কথা, অর্থাৎ আল্লাহ্‌র কালাম শোনে আমি তার কাছে এই সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, কেউ যদি এর সংগে কিছু যোগ করে তবে আল্লাহ্‌ও এই কিতাবে লেখা সমস্ত গজব তার জীবনে যোগ করবেন। [19] আর এই কিতাবের সমস্ত কথা, অর্থাৎ আল্লাহ্‌র কালাম থেকে যদি কেউ কিছু বাদ দেয় তবে আল্লাহ্‌ও এই কিতাবে লেখা জীবন্তগাছ ও পবিত্র শহরের অধিকার তার জীবন থেকে বাদ দেবেন।

প্রকাশিত কালাম 22:18-19

অনেকে বলে যে ইহুদি বা খ্রিষ্টিয়ানরা তাদের পবিত্র কিতাব পরিবর্তন করেছে। যদিও কুরআন এ বিষয়ে খুব স্পষ্ট নয়। উদাহরণস্বরূপ, এটি বলে যে ইহুদিরা 'তাদের জিহ্বা দিয়ে বই বিকৃত করেছে' (আল 'ইমরান 78) বা 'একটি ক্ষণস্থায়ী লাভের জন্য' কিছু লিখেছে (আল-বাকারাহ 79), কিন্তু এমন একটি শব্দ নেই যে বাইবেল বিকৃত হয়েছে। .

সূরা-ইউনূস ৯৪-এ, এমনকি কোরান মুহাম্মদকে ইহুদিদের সাথে পরামর্শ করতে বলেছে যখন সন্দেহ আছে, কারণ মাবুদ তাদের পূর্ববর্তী বইগুলি দিয়েছেন:

فَاِنۡ كُنۡتَ فِىۡ شَكٍّ مِّمَّاۤ اَنۡزَلۡنَاۤ اِلَيۡكَ فَسۡــَٔلِ الَّذِيۡنَ يَقۡرَءُوۡنَ الۡكِتٰبَ مِنۡ قَبۡلِكَ​ۚ لَقَدۡ جَآءَكَ الۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّكَ فَلَا تَكُوۡنَنَّ مِنَ الۡمُمۡتَرِيۡنَۙ‏ ٩٤

আমি তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি তাতে যদি তুমি সন্দেহ পোষণ কর তাহলে তোমার পূর্বে থেকে যারা কিতাব পাঠ করে আসছে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর। তোমার কাছে তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে প্রকৃত সত্য এসেছে। কাজেই তুমি কক্ষনো সন্দেহ পোষণকারীদের মধ্যে শামিল হয়ো না। (১০:৯৪)

——————————————————————————————————————————————————————————————————————

*1 See also Surah Yunus 64, Al-An’am 115 or Al-Kahf 27. *1 আরও দেখুন সূরা ইউনুস 64, আল-আনআম 115 বা আল-কাহফ 27।

*2 See also Al-Mad’idah 46-48 and Ali ‘Imran 3.*2 আরও দেখুন আল-মাদিদাহ 46-48 এবং আলী 'ইমরান 3।